সোমবার, ৪ নভেম্বর ২০২৪
২০ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আগস্টের পট পরিবর্তনে সংসদ ভেঙে দেওয়ায় ‘কপাল পুড়েছে’ ৫২ এমপির

অনলাইন ডেস্ক | আপডেট: শনিবার, নভেম্বর ২, ২০২৪

আগস্টের পট পরিবর্তনে সংসদ ভেঙে দেওয়ায় ‘কপাল পুড়েছে’ ৫২ এমপির
মাসখানেক সময় পেলে ৫০০ কোটি টাকা মূল্যের ৫২টি গাড়ি শুল্কমুক্ত সুবিধায় খালাস করতে পারতেন দ্বাদশ সংসদের সদস্যরা। কিন্তু ৫ আগস্টের পট পরিবর্তন ও দ্রুততম সময়ে সংসদ ভেঙে দেওয়ায় ‘কপাল পুড়েছে’ ৫২ এমপির। গাড়ি আমদানির যাবতীয় প্রক্রিয়া সম্পন্নের পরও সাবেক হয়ে যাওয়ায় এখন আর শুল্কমুক্ত সুবিধা পাচ্ছেন না সেই এমপিরা। এসব গাড়ি ছাড় করতে হলে এখন ৮৫০ শতাংশ হারে শুল্ক পরিশোধ করতে হবে তাদের। সেই সঙ্গে পূরণ করতে হবে কাস্টমসের শর্তাবলি। তা ছাড়া সাবেক এমপি অনেকেই এখন পলাতক। তাদের এখন আর এই পথে হাঁটার সম্ভাবনা নেই। তাই গাড়ি বন্দরে আসার ৩০ দিন অতিবাহিত হতেই সেগুলো নিলামে তুলছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এ মাসের মধ্যেই নিলামের তারিখ চূড়ান্ত হবে।
এরই মধ্যে দুই দফায় ২৪ জন এমপিকে শর্ত মেনে গাড়ি খালাস করতে নোটিশ দিয়েছে তারা। কিন্তু এটি নিয়ম রক্ষার নোটিশ। মূলত নিলামেই উঠবে সব গাড়ি। এর মধ্যে রয়েছে-মার্সিডিজ, বিএমডব্লিউ, জাগোয়ার, টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজার, রেঞ্জ রোভার, মিতসুবিশি, ফোর্ড, লেক্সাস ব্র্যান্ডের গাড়ি। গত ১৫ বছরে ৫ হাজার ১৪৭ কোটি টাকা মূল্যের দামি গাড়ি শুল্কমুক্ত সুবিধায় এনেছেন এমপিরা।
কাস্টমস সূত্র বলছে, শুল্ক ছাড়ে অর্ডার করলেও সাবেক এমপিদের এসব গাড়ি নিতে হলে এখন ৮৫০ শতাংশ হারে শুল্ক দিতে হবে। সেই সঙ্গে পূরণ করতে হবে কাস্টমসের শর্তাবলি। তবে সাবেক এমপিদের অনেকেই পলাতক থাকায় গাড়িগুলো তাদের নেওয়ার সম্ভাবনা নেই। তাই গাড়ি বন্দরে আসার ৩০ দিন অতিবাহিত হতেই সেগুলো নিলামে তুলছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এ মাসের মধ্যেই নিলামের তারিখ চূড়ান্ত হবে।
জানা গেছে, এরই মধ্যে দুই দফায় ২৪ জন সাবেক এমপিকে শর্ত মেনে গাড়ি খালাস করতে নোটিশ দিয়েছে চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এটি নিয়ম রক্ষার নোটিশ। শেষ পর্যন্ত গাড়িগুলো নিলামেই উঠবে।
এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের উপ-কমিশনার সাইদুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, বিলাসবহুল এসব গাড়ির শুল্কসহ প্রতিটির বাজারমূল্য ৮ থেকে ১২ কোটি টাকা। গাড়িগুলোর ইঞ্জিন ক্যাপাসিটি ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার সিসি। স্বাভাবিক ভাবে এ ধরনের গাড়ির ওপর ৮৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করা হয়ে থাকে। কিন্তু এমপিরা এসব গাড়িতে পেতেন শতভাগ শুল্কমুক্ত সুবিধা। এখন সংসদ না থাকায় তারা শুল্কমুক্ত সুবিধা আর পাবেন না।
তিনি আরও বলেন, বন্দরে গাড়ি আমদানির পর ৩০ দিন পার হয়ে গেলে চট্টগ্রাম বন্দর নিলামের জন্য কাগজপত্র আমাদের কাছে হস্তান্তর করে। ওই কাগজপত্রে ছাড় না করা গাড়িগুলোর বিস্তারিত উলে­খ থাকে। এর পর আমরা আমদানিকারক বরাবর একটি নোটিশ ইস্যু করি। ইতোমধ্যে এমপি বা তাদের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের নামে নোটিশ পৌঁছানো হয়েছে। তবে এখানে অনেক শর্ত যুক্ত আছে। যেগুলো আসলে পূরণ করতে পারবেন না সাবেক এমপিরা। ফলে গাড়িগুলো নিলামে উঠতে যাচ্ছে বলে জানান তিনি।


নিলামে উঠছে যাদের গাড়ি : বিলাসবহুল গাড়ি হাতছাড়া হতে যাওয়া সাবেক এমপিদের মধ্যে খুলনার এস এম কামাল হোসেন, ঝিনাইদহের নাসের শাহরিয়ার জাহেদী, যশোরের তৌহিদুজ্জামান, মাগুরা-১ আসনের সাকিব আল হাসান, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের এস এম আল মামুন, বাঁশখালীর মুজিবুর রহমান, নওগাঁর সুরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, গাইবান্ধার শাহ সরোয়ার কবির, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এসএকে একরামুজ্জামান, নেত্রকোনার সাজ্জাদুল হাসান, সুনামগঞ্জের মুহাম্মদ সাদিক, ময়মনসিংহের আবদুল ওয়াহেদ, জামালপুরের আবুল কালাম আজাদ, সাবেক ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু, সাবেক মন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক ও মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ আসনের ফয়জুর রহমান, ল²ীপুর-৩ আসনের গোলাম ফারুক পিংকু, কিশোরগঞ্জ-৫ আসনের মুজিবুর রহমান মঞ্জু, সংরক্ষিত আসনের জান্নাত আরা হেনরী ও তারানা হালিমের নাম রয়েছে বলে জানা গেছে।


কাস্টমসের নিলাম শাখার তথ্য অনুযায়ী, সাবেক এমপিদের নামে আসা বেশির ভাগ গাড়িই ল্যান্ড ক্রুজার। শুল্কসহ এসব গাড়ি ছাড় করলে প্রতিটির দাম পড়বে ৮ থেকে ১০ কোটি টাকা। শুল্কমুক্ত সুবিধায় ছাড় করলে প্রতিটি গাড়ির দাম পড়তো এক থেকে সর্বোচ্চ ২ কোটি টাকা। শুল্কমুক্ত সুবিধা নিতে পারলে প্রতি গাড়িতেই এমপিরা ৮/৯ কোটি টাকা ছাড় পেতেন।


চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক জানান, ৫২টি গাড়ির মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরে যেগুলো ৩০ দিন আগে আমদানি হয়েছে, সেগুলোর তালিকা কাস্টমসকে দেওয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে বাকিগুলোর তালিকাও দেওয়া হবে। 


বেশির ভাগ গাড়িই ল্যান্ড ক্রুজার : কাস্টমসের নিলাম শাখা থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, বেশির ভাগ গাড়িই ল্যান্ড ক্রুজার। শুল্কসহ এসব গাড়ি ছাড় করলে প্রতিটির দাম পড়বে ৮ থেকে ১০ কোটি টাকা। শুল্কমুক্ত সুবিধায় ছাড় করলে প্রতিটি গাড়ির দাম পড়ত এক থেকে সর্বোচ্চ ২ কোটি টাকা। শুল্কমুক্ত সুবিধা নিতে পারলে প্রতি গাড়িতেই এমপিরা ৮/৯ কোটি টাকা ছাড় পেতেন। 


কখন নিলামে ওঠে গাড়ি : চট্টগ্রাম কাস্টমস নিলাম ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ এয়াকুব চৌধুরী জানান, যেসব চালানের পণ্য আমদানিকারকরা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে খালাস নেন না, কিন্তু ব্যবহারের উপযোগিতা থাকে, সেগুলো নিলামে তোলে কাস্টমস হাউস। যেসব পণ্য নষ্ট হওয়ায় ব্যবহারের উপযোগিতা হারিয়েছে কিংবা বিপজ্জনক, সেগুলো ধ্বংস করা হয়। তবে চট্টগ্রাম বন্দর ইয়ার্ডে আমদানি পণ্য নামার ৩০ দিনের মধ্যে আমদানিকারককে তা সংগ্রহ করতে হয়। এই সময়ের মধ্যে কোনো আমদানিকারক পণ্য সরবরাহ না নিলে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ কাস্টমসের নিলাম শাখায় প্রেরণ করে। নিলাম শাখা তখন সংশ্লিষ্ট আমদানিকারককে নোটিশ দেয়। নোটিশের ১৫ দিনের মধ্যে পণ্য সরবরাহ না নিলে সর্বমোট ৪৫ দিনের মধ্যে পণ্য নিলামে তুলতে পারে কাস্টমস। 
সূত্র : ঢাকাটাইমস।
0 Comments